সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্রাহকরা এলপিজি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন। আগে রেস্টুরেন্টগুলোতে এলপিজি বেশী ব্যবহৃত হতো। কিন্তু তীব্র গ্যাস সংকটের কারনে এখন বাসা বাড়িতে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি এখন মানুষ সচেতন হয়েছে এলপিজি ব্যবহারে।
বাজারে কোন কোম্পানির সিলিন্ডার নিরাপদ, সঠিক মাপের নিশ্চয়তা, ওজনে হালকা, গ্যাসের কোয়ালিটি ইত্যাদি সকল বিষয়ে গ্রাহকগণ সচেতন।
রাজধানীর বেইলি রোডের একজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে নিজে বেক্সিমকো’র স্মার্ট সিলিন্ডার এলপিজি ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, আগে যেমন প্রায়ই এলপিজি’র এক্সিডেন্টের কথা শোনা যেত।
কিন্তু বেক্সিমকো’র স্মার্ট এলপিজি বাজারে আসার পর থেকে এধরনের দুর্ঘটনার কথা শোনা যায় না। এই সিলিন্ডারটি নরওয়ের কোম্পানি হেক্সাগন এবং ভারতের টাইম টেকো প্লাস্ট থেকে আমদানি করা হয়। এদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে এই গ্রাহক নিশ্চিত হয়েছেন যে, এই সিলিন্ডারটি ভালো। তাই তিনি এটি ব্যবহার করেন। এ থেকে একটি বিষয় মূল্যায়িত হয় যে, গ্রাহক এখন কতটা সচেতন। আর ভোক্তাদের সচেতনতাই মার্কেটে সবরকমের পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করবে।
উন্নত প্রযুক্তির সিলিন্ডারে বেক্সিমকো এলপিজির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন এবং স্পেসিফিকেশন অনুসারে তৈরি বেক্সিমকো ফাইবার গ্লাস সিলিন্ডারগুলো যেমন টেকসই, তেমনি নিরাপদ। এই কম্পোজিট সিলিন্ডারগুলোতে গ্লাস ফাইবার ও রেজিনের তিনটি লেয়ার থাকে, যা সিলিন্ডারকে দেয় অভাবনীয় শক্তি ও স্থায়িত্ব। বেক্সিমকো স্মার্ট সিলিন্ডারে গ্যাসের লেভেল বাইরে থেকে দেখা যায়। এ ছাড়া সাধারণ সিলিন্ডারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক ওজন এবং মরিচা পড়ে না ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেক্সিমকো এলপিজি লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘বেক্সিমকো এলপিজি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সিলিন্ডার নিয়ে এসেছে।
এরই মধ্যে ফাইবার গ্লাসের এই সিলিন্ডার গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সিলিন্ডারের চাহিদা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বর্ধিত এই চাহিদা মেটাতে ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা নতুন করে সিলিন্ডার ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমদানীকৃত বাল্ক এলপিজি রপ্তানির মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো বেগবান করতে চেষ্টা করছি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বেক্সিমকো এলপিজি লিমিটেড বেক্সিমকো গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। এটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। বর্তমানে এলপিজি খাতে বেক্সিমকোর মার্কেট শেয়ার ৬ শতাংশ। আগামী বছর মার্কেট শেয়ার ৮ শতাংশে এবং ২০২৩ সালে ১০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ’ তিনি বলেন, ‘সিলিন্ডার ব্যবহারে সচেতনতার লক্ষ্যে আমরা সারা দেশে ক্যাম্পেইন করেছি। মূলত সিলিন্ডারের জন্য বিস্ফোরণ হয় না। বিস্ফোরণ হয় নিম্নমানের রেগুলেটর, হোসপাইপসহ অ্যাকসেসরিজ ব্যবহারের কারণেই। আবার অনেক সময় সিলিন্ডার ব্যবহারে সচেতনতার অভাবেও বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। ’
এলপিজি খাতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এলপিজি খাতে পাঁচ-ছয়টির বেশি কম্পানি নেই। কিন্তু আমাদের ছোট এই দেশে ২৯টি কম্পানি রয়েছে। কম্পানি বেশি থাকার কারণে বাজারে টিকে থাকতে কম দামে বিক্রি করছে। একেকটি সিলিন্ডারে অনেক টাকা ভর্তুকি দিয়ে আমাদের ব্যবসা করতে হচ্ছে। যানবাহানে এলপিজির ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, ‘যানবাহনেও এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে।
বর্তমানে সব এলপিজি কম্পানি মিলে স্টেশন আছে ৫০০-এর বেশি। এই স্টেশনগুলোতে প্রতি মাসে ৮-১০ হাজার মেট্রিক টন এলপিজির চাহিদা রয়েছে। স্টেশনগুলোতে আগামী বছর ১৫-২০ হাজার মেট্রিক টনের চাহিদা হয়ে যাবে। তবে গত সাত-আট বছরের মধ্যে গত নভেম্বরে এলপিজির সর্বোচ্চ দাম থাকায় কিছু ব্যবহারকারী কমেছে। দাম যখন আবার কমে আসবে তখন এলপিজির সব গ্রাহক চলে আসবে। বর্তমানে দেশে এলপিজিতে রূপান্তর হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার গাড়ি। এখন প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য হারে এলপিজিতে রূপান্তর হচ্ছে।
বেক্সিমকো এলপিজির ৫০০টি স্টেশনের লাইসেন্স রয়েছে। বর্তমানে বেক্সিমকোর এলপিজি স্টেশন চালু রয়েছে ২৫টি, যা আগামী বছরের শেষে ১০০টি স্টেশন হয়ে যাবে। এ ছাড়া ২৫টি কনভার্সন ওয়ার্কশপ লাইসেন্স রয়েছে, যা বাস্তবায়নের কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। দেশের এলপিজি খাত নিয়ে মেহেদি হাসান বলেন, ২০১৩ সালে ৮০ হাজার মেট্রিক টন এলপিজির চাহিদা ছিল। এ খাতে ব্যাপকভাবে চাহিদা বেড়েছে ২০১৬ সাল থেকে। ৮০ হাজার মেট্রিক টনের চাহিদা ২০১৬ সালে এসে প্রায় চার লাখ মেট্রিক টনে চলে গিয়েছিল। ২০২০ সালে এসে সেটি ১২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টনে চলে আসে। বাংলাদেশে কোনো খাতেই অল্প সময়ের মধ্যে এত প্রবৃদ্ধি আসেনি। বর্তমানে বাজারে চাহিদা আছে সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টনের। ২০২৫ সালের মধ্যে এ বাজার ২৩ লাখ মেট্রিক টনে চলে যাবে। তিনি আরো বলেন, বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করতে হলে ৭ শতাংশ ভ্যাট কমাতে হবে। তাহলেই বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে দেওয়া যাবে।
এরই মধ্যে এলপিজি ব্যবহার করছে দেশের এক কোটি ৬০ লাখ পরিবার। তারা মাসে বা দুই মাসে হলেও ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। ঢাকায় বসবাসকারীরা নিয়মিত ব্যবহার করে, গ্রামাঞ্চলের অনেক ব্যবহারকারী কাঠ-লাকড়ির পাশাপাশি সুবিধাজনক সময়ে এলপিজি দিয়ে রান্না করে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসছে। তাই প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারকারী ৫২ লাখ পরিবার যারা আছে, যখন প্রাকৃতিক গ্যাস থাকবে না তখন এই পরিবারগুলো এলপিজিতে রূপান্তরিত হবে। এটি যখনই বন্ধ হবে তখন এলপিজি খাতে আরেকটি বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আসবে। কারণ এরাই হবে এলপিজির প্রকৃত ব্যবহারকারী। তারা মাসে দুই-একটি সিলিন্ডার ব্যবহার করবে।
মেহেদি হাসান বলেন, ‘করোনাকালে বিশ্বব্যাপী এলপিজিতে প্রবৃদ্ধি করতে পারেনি, সেখানে বাংলাদেশ এই খাতে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করেছে। ভবিষ্যতে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি করে ২০২৫ সালে ২৩ লাখ মেট্রিক টনে চলে যাবে। এলপিজির বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমাদের দেশে এলপিজির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে। গৃহস্থালি থেকে কলকারখানা, যানবাহন থেকে বাল্ক সলিউশন সব জায়গাতেই মানুষ এখন ভরসা রাখছে এলপিজিতে। এই জ্বালানি যে শুধু নিরাপদ তাই-ই নয়, এটি একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে এলপিজি’র প্রবৃদ্ধি নিম্নমূখী হলেও বেক্সিমকো’র প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশ।
রাজধানীর ভেতরে বেক্সিমকো এলপিজি সিলিন্ডার অর্ডার দেওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যেই হোম ডেলিভারি নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও বেক্সিমকো এলপিজি লিমিটেডের এই চিফ মার্কেটিং অফিসার জানান। ১৬৫৬৫ বা ০৯৬০৯০১৬৫৬৫ এ ফোন করে এখন আপনি সরাসরি হোম ডেলিভারির জন্য অর্ডার করতে পারেন। বেক্সিমকো এলপিজি এখন গ্রাহকের প্রথম পছন্দ।