ঢাকা/দুবাই, ৩০ জুন, ২০২০: ভারতের সর্ববৃহৎ জ্বালানী পরিশোধক ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের সর্ববৃহৎ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের শতভাগ মালিকানাধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইওসি মিডল ইস্ট এফজেডই, দুবাই ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো এলপিজি’র হোল্ডিং কোম্পানি আরআর হোল্ডিংস লিমিটেড, রাস আল খাইমাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আজ বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবসার জন্য ৫০:৫০ মালিকানায় একটি যৌথ মূলধনি কোম্পানি (জেভিসি) প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ভারত সরকারের মাননীয় পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও স্টিল বিষয়ক মন্ত্রী জনাব ধর্মেন্দ্র প্রধান চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার ইতিহাসে এই চুক্তি একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে। ইন্ডিয়ান ওয়েল-এর দুবাই-ভিত্তিক একটি কোম্পানি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল একটি এলপিজি কোম্পানির সঙ্গে তাদের দুবাইভিত্তিক হোল্ডিং কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবসার জন্য একজোট হচ্ছে। মাননীয় মন্ত্রী আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এলপিজি প্রবেশ করায় যেভাবে সাফল্য এসেছে, তেমনি নতুন এই জয়েন্ট ভেঞ্চারও বাংলাদেশে সুলভ মূল্যে এলপিজি সরবরাহের মাধ্যমে আর্থসামাজিক পরিবর্তনে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা জনাব সালমান ফজলুর রহমান এমপি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রমাণ এই নতুন জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি (জেভিসি)। সারাবিশ্ব যখন কভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক দুর্যোগ নিয়ে লড়াই করছে, তখন এই ধরণের বিনিয়োগ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার শক্তিশালী ও টেকসই বন্ধুত্বেরই প্রতিফলন।”
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব নসরুল হামিদ, এমপিও উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ‘ভিশন ২০৪১’ অনুযায়ী দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জ্বালানী চাহিদা পূরণের ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছে সরকার। বেক্সিমকো এলপিজি ও ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের মধ্যকার এই জয়েন্ট ভেঞ্চার আমাদের সেই লক্ষ্য ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে। তাদের ক্রয় ক্ষমতাও আগের চেয়ে বেশি। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে এলপিজি খাত ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। আগামী বছরগুলোতেও এই খাত আরও এগিয়ে যাবে। এ কারণে দুই অভিজ্ঞ ও বড় কোম্পানির মধ্যে এই মাত্রার আংশিদারিত্ব ও বিনিয়োগ পুরো শিল্পেই গেমচেঞ্জার হয়ে উঠার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইন্ডিয়ান ওয়েল-এর চেয়ারম্যান জনাব সঞ্জিব সিং বলেন, ১৯৯৯ সালে লুব্রিকেন্টস বাজারজাত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ইন্ডিয়ান ওয়েল। আজ বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী আংশিদারের সঙ্গে একজোট হয়েছি। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে এলপিজি বাজার পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১২-১৩% হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এই যৌথ উদ্যোগের শক্তি হবে ইন্ডিয়ান ওয়েলের দক্ষতা ও স্থানীয়ভাবে বেক্সিমকোর অভিজ্ঞতা। ব্যবসায়িক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই জেভিসি’র কাজ শুরু হবে বেক্সিমকোর এলপিজি সম্পত্তি অধিগ্রহণের মাধ্যমে। জনাব সিং বলেন, “আমরা বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্র বন্দরে বড় একটি এলপিজি টার্মিনাল স্থাপন করতে চাই, যার ফলে বৃহৎ গ্যাস ক্যারিয়ার থেকে এলপিজি গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এতে করে আমদানির খরচ হ্রাস পাবে। আর আমদানির খরচ কমলে বাংলাদেশের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি পাবেন।”
আরআর হোল্ডিংস লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান জনাব শায়ান এফ রহমান বলেন, “আমরা ইন্ডিয়ান ওয়েলের সঙ্গে একসাথ হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত। আমাদের গ্রাহক পর্যায়ের ব্যবসা ও গ্রাহকদের সম্পর্কে আমাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে হাইড্রোকার্বন খাতে ইন্ডিয়ান ওয়েলের অতুলনীয় শক্তিমত্তা ও অভিজ্ঞতার সংমিশ্রন ঘটবে। একসঙ্গে, আমরা মনে করি আমাদের সমন্বিত শক্তিতে আমরা উদ্ভাবনশীলতার শিখরে পৌঁছাতে পারবো এবং এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের গ্রাহকপর্যায়ের সবচেয়ে বৃহৎ তেল ও গ্যাস কোম্পানিতে পরিণত হতে পারবো।”
বাংলাদেশের সবচেয়ে পছন্দের, আস্থার ও প্রিমিয়ার মানের এলপিজি কোম্পানিতে পরিণত হতে চায় এই যৌথ মূলধনি কোম্পানি (জেভিসি)। সবচেয়ে নিরাপদ, স্মার্ট ও সবচেয়ে সুবিধাজনক এলপিজি সমাধানের পাশাপাশি সর্বাধুনিক গ্রাহক সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এই জেভিসি। এছাড়া লিউব ব্লেন্ডিং প্লান্ট, এলএনজি, পেট্রোকেমিক্যাল, দুই দেশের মধ্যে পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে এলপিজি রপ্তানি, নবায়নশীল জ্বালানী, ইত্যাদি সহ অন্যান্য তেল ও গ্যাস ব্যবসার মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনতে চায় এই নতুন যৌথ কোম্পানি।